Header Ads Widget

মহড়ার উদ্দেশ্য সামরিক শক্তি প্রদর্শন নাকি শত্রুপক্ষকে আগ্রাসন থেকে বিরত রাখতে ভয় দেখানো

মহড়ার উদ্দেশ্য যেমন সামরিক প্রতিপত্তি দেখানো সেই সঙ্গে শত্রুপক্ষকে ভয় দেখানো যেনো তারা আগ্রাসন চালানো থেকে বিরত থাকে। চীন আগামী সপ্তাহে বেইজিংয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া আয়োজন করতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতের যেকোনো সামরিক সংঘাতে এসব অস্ত্রের ব্যবহার কতটা নিখুঁত এবং প্রাণঘাতী হতে পারে তাই তুলে ধরবে। অতি উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর মারণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সমুদ্রের নিচে চলাচল সক্ষম ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর যুদ্ধক্ষেত্রের সেন্সর, তাত্ক্ষণিক সতর্কীকরণে সক্ষম এবং লক্ষ্য নির্ধারক রাডার এবং আকাশ প্রতিরক্ষা লেজারের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শিত হবে।তখন এর মাধ্যমে শুধু মারণাস্ত্রের সক্ষমতাই প্রদর্শিত হবে না, বরং এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হতে যাচ্ছে শত্রুদের ভয় দেখানো এবং তাদেরকে আগ্রাসন চালানো থেকে বিরত রাখা

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য শত্রুদের ভয় দেখানো এবং তাদেরকে যেকোন ধরনের হামলা থেকে বিরত রাখা। সিঙ্গাপুরভিত্তিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড্রু থম্পসন বলেন, ‘এটি একটি প্রদর্শনীমূলক অনুষ্ঠান, তবে এটি কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছুই জানায় না। আমরা এখনও জানি না যে চীন এই প্রযুক্তিগুলোকে একত্রে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হবে কিনা। তবে, চীন এই মহড়ার মাধ্যমে ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো, রাশিয়া, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশগুলোকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে বিরত রাখতে একটি শক্তিশালী সংকেত পাঠাতে চাচ্ছে।’

এছাড়া, চীনের নতুন সামুদ্রিক ড্রোনের উপস্থিতি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ড্রোনটি এত বড় যে এটি সাধারণ সাবমেরিন থেকে ছোঁড়া সম্ভব নয়, এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের আন্ডারওয়াটার ড্রোন প্রোগ্রামের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। এটি সামুদ্রিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে নতুন এক বিপদের সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত তাইওয়ান পরিস্থিতিতে।

পারমাণবিক শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রও সামরিক মহড়ার মাধ্যমে শত্রুপক্ষকে আতঙ্কিত রাখতে চায়। বিশেষ করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের মহড়াতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনী একত্রিত হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করে থাকে। ২০২৪ সালের মহড়ায়, যুক্তরাষ্ট্র ৩০টি দেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে বৃহত্তম সামরিক মহড়া আয়োজন করে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল রুশ আক্রমণ থেকে ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। 

রাশিয়াও বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, এর সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে। চলতি বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত রাশিয়ার ‘ভিকটরি ডে’ মহড়ায়, রাশিয়া তার নতুন আক্রমণাত্মক ট্যাঙ্ক এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেছে, যা পশ্চিমাদের মনে ভয়ের সঞ্চার করেছে।


নিয়মিতভাবে ভারতও এর আন্তর্জাতিক সীমান্তে ‘বর্ডার ডিফেন্স’ মহড়ার মাধ্যমে পাকিস্তান এবং চীনের বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে থাকে। ২০২৫ সালের মহড়ায়, ভারতের সামরিক বাহিনী মেঘালয় এবং অরুণাচল প্রদেশে নতুন বিধ্বংসী ট্যাঙ্ক এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা চালায়।

যখন একটি দেশ তার সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে, এটি শুধু নতুন প্রজন্মের অস্ত্রভান্ডারকে পরিচয় করিয়ে দেয় না, বরং শত্রুদেশের প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করে। চীনের সামরিক মহড়া, যেখানে নতুন প্রযুক্তি ও অস্ত্রের ব্যবহার প্রদর্শিত হবে, তা মূলত শত্রুপক্ষকে আগ্রাসী হয়ে উঠার ঝুঁকি কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।